empty
 
 
08.04.2025 02:20 PM
মার্কিন স্টক মার্কেট: ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের আসল কারণ উন্মোচিত। পর্ব ১

This image is no longer relevant

S&P 500

৮ এপ্রিলের পর্যালোচনা

মার্কিন স্টক মার্কেট: ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের আসল কারণ উন্মোচিত। পর্ব ১

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান স্টক সূচকগুলোর পারফরম্যান্স: ডাও জোন্স সূচক -0.9%, নাসডাক +0.1%, S&P 500 সূচক -0.2%, S&P 500 সূচক: 5,062, ট্রেডিং রেঞ্জ: 4,800–5,700।

'শুল্ক' সংক্রান্ত সংবাদ শিরোনাম: সোমবার, ৭ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেন, যদি চীন ৮ এপ্রিলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের 34% শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় আরোপিত নিজেদের 34% পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তাহলে তিনি চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত 50% শুল্ক আরোপ করবেন।

মঙ্গলবার সকালেই চীন জবাব দেয়—তারা যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নতিস্বীকার করবে না এবং পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার করবে না। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কোনো আলোচনার সময়সূচি নির্ধারিত নেই; উভয় পক্ষই তাদের কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে।

মন্দার আশঙ্কা ও অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে পরিবর্তন: গোল্ডম্যান স্যাকস আগামী ১২ মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দার সম্ভাবনা 45%-এ উন্নীত করেছে—যা শীর্ষ বিনিয়োগ ব্যাংকগুলোর এক ক্রমবর্ধমান তালিকায় যুক্ত হলো, যারা তাদের পূর্বাভাস সংশোধন করছে। জেপিমরগ্যানের অর্থনীতিবিদরা এখন বলছেন, শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি 0.3% হ্রাস পাবে—যা আগে পূর্বাভাস দেওয়া 1.3% প্রবৃদ্ধির তুলনায় একটি উল্লেখযোগ্য পতন।

বিশ্ববাজারে প্রতিক্রিয়া: সোমবার তাইওয়ানের শেয়ারবাজার প্রায় 10% পতনের সিকার হয়—যা দেশটির ইতিহাসে একদিনের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন। যুক্তরাষ্ট্রের ইকুইটি ফিউচারও আরেকটি কঠিন সেশন পার করেছে। হংকংয়ে স্টক সূচকে 13% দরপতনের কারণে ট্রেডিং স্থগিত করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আলিএক্সপ্রেসের শেয়ারের দর 19% কমে যায়।

ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা খাত: আগে যেখানে সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি প্রত্যাশার ভিত্তিতে এই খাত ভালো পারফর্ম করছিল, এখন তা এপ্রিল 2020-এর পর সবচেয়ে বেশি দৈনিক দরপতনের পথে রয়েছে।

শুল্ক আরোপের পর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানান, গত বুধবার শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর ৫০টির বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। কমার্স সেক্রেটারি হাওয়ার্ড লুটনিক জানান, এই শুল্ক "কয়েক দিন বা সপ্তাহ" স্থায়ী হবে।

ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া: রবিবার মার্কেটের বড় দরপতনের প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন শুল্ক ছাড় চাওয়া দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে প্রস্তুত, তবে শুধুমাত্র তখনই সেটি করা হবে যদি তারা "যুক্তরাষ্ট্রকে বার্ষিক ও পূর্ববর্তী সময়ের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করে।" যদি তার এই অবস্থান অনড় থাকে, তাহলে আলোচনায় সফলতা পাওয়া কঠিন হবে। চীন বা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অতীতের বাণিজ্য ঘাটতির জন্য 'রেট্রোঅ্যাকটিভ পেমেন্ট' দিতে সম্মত করানো কল্পনা করাও কঠিন—এটা যুদ্ধ পরবর্তী ক্ষতিপূরণ ছাড়া সাধারণত দেখা যায় না।

সোমবার সকাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, S&P 1500 সূচকের মোট বাজার মূলধন $9.8 ট্রিলিয়ন হ্রাস পেয়েছে।

উপসংহার: অনেক দেশই যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে চায় এবং বিনিময়ে ডলার পেতে চায়—এই কাঠামোয় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মৌলিক সমস্যা নেই। বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত লাভজনক।

আসল সমস্যা হলো—এই রপ্তানিকারক দেশগুলো পরবর্তীতে মার্কিন সরকারি ঋণ গ্রহণ করে, যার ওপর সুদ দিতে হয়—এখন এই সুদের পরিমাণ বছরে $800 বিলিয়নের কাছাকাছি, যা যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যয়ের তালিকায় প্রতিরক্ষা বাজেটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর পেছনের কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণের পরিমাণ বর্তমানে প্রায় $37 ট্রিলিয়ন। উল্লেখযোগ্য হলো, সমস্যাটি ঋণের পরিমাণ নয়—বরং সেটির খরচ। কল্পনা করুন, যদি এমন একটি আইন পাস হয় যেখানে বার্ষিক সুদের হার 2% বা এমনকি 1.5% নির্ধারণ করা হয়—তাহলে ট্রেজারিতে বিশাল আউটফ্লো, বন্ড বিক্রির ঢল, এবং শেষ পর্যন্ত ডলারের তীব্র দরপতন দেখা যাবে। সেই পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি যতটা অযৌক্তিক মনে হয়, বাস্তবে ততটা নয়। তবে আদর্শভাবে, এই ধরনের কৌশল G7-ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে গ্রহণ করা উচিত।

পুনশ্চ: মঙ্গলবার সকালে, এই পর্যালোচনার উপসংহার চূড়ান্ত হওয়ার ঠিক পরেই খবর আসে—ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, নতুন শুল্কের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার জাতীয় ঋণ পরিশোধ করতে পারবে।

Recommended Stories

এখন কথা বলতে পারবেন না?
আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন চ্যাট.